Haripur – হরিপুর

আমাদের হরিপুর

About

অবস্থান: সিলেট শহর থেকে তামাবিল রোড ধরে প্রায় ২২কিলোমিটার উত্তরে জৈন্তাপুর উপজেলাধীন ৫নং ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত হরিপুর বাজার। এই বাজারটি অত্র এলাকার প্রাণকেন্দ্র।

পরিচিতি: কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই এলাকাকে সকলে হরিপুর নামেই চেনে। এটি নির্দিষ্ট একটি গ্রামের নাম হলেও, মূলত ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন পুরোটাই হরিপুর নামে পরিচিত। এই এলাকার অধীনে রয়েছে ৬টি গ্রাম রিয়েছে, যথা: হরিপুর, বালিপাড়া, শিকারখাঁ, হেমু, শ্যামপুর, বাগেরখাল। এই নামের উৎপত্তি সম্পর্কে সমাজে বিভিন্ন রটনা থাকলেও সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য কোনো তত্ত্ব পাওয়া যায়নি।

শিক্ষাদীক্ষা: এখানে রয়েছে ৭টি সরকারী ও ৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে তিনটি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে ইসলামি শিক্ষারও ব্যাপক গুরুত্ব। সে সুবাদের দুটি দাওরায়ে হাদিস মাদরাসাসহ মোট ১১টি কওমি, ৫টি বালিকা মাদরাসা ও একটি প্রাথমিক বেসরকারি আলিয়া মাদরাসা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম মাদরাসা দারুল উলূম হেমুর প্রতিষ্ঠাকালীন সন হচ্ছে ১৮৭৯। এছাড়াও মাদরাসাতুল উলূম হরিপুর বাজার মাদরাসা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সুনাম কুড়িয়ে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ফারেগ হয়ে অনেকে দেশবিদেশের বিভিন্ন নামীদামি প্রতিষ্ঠান- দারুল উলূম দেওবন্দ ভারত, আল-আযহার ইউনিভার্সিটি মিশর, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান থেকে সুনামের সাথে ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং বর্তমানেও অধ্যয়ন চালিয়ে যাচ্ছেন।

অবদান: এখানকার মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, লেখালেখি, ব্যবসাবানিজ্য, মানবসেবা এবং সংস্কারে রয়েছে দেশব্যাপী ব্যাপক অবদান।

ধর্ম ও সামাজিকতা: আমাদের হরিপুর এলাকা দেশের অন্যান্য এলাকার চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই এলাকার রয়েছে ভিন্ন ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং অবদান। এখানকার মানুষ বেশ ধার্মিক। মহিলারা শরয়ী পর্দায় অভ্যস্ত। বিয়ের অনুষ্ঠান এবং বাজারে কোনো প্রকার অশ্লীল কর্মকাণ্ড অথবা উচ্চস্বরে গানবাজনা বাজনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কারণে তাদের মধ্যে একতা, ভ্রাতৃত্ব, অতিথিপরায়ণতা, সামাজিক শৃঙ্খলা, বড়োদের শ্রদ্ধা ও আলেমদের সম্মানের ব্যাপারে তারা বেশ সচেতন। এখনো তারা আইনের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক সালিশকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে থাকেন। কোনো অসামাজিক কার্যকলাপ, মদ, জুয়া, রঙ্গমেলা, গানের কনসার্ট, অশ্লীলতা, ইভটিজিং, সামাজিক বিরক্তি ও অস্থিরতা ইত্যাদির কোনো সুযোগ নেই এখানে। এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত যাকেই পাওয়া যাবে, তাকে উপযুক্ত শাস্তিসহ জরিমানার আইনও জারি রয়েছে। এসব কারণে দেশবিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের থেকে সুনামও কুড়িয়ে নিয়েছেন তারা।

খনিজ সম্পদ: আল্লাহর দান খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের এলাকা। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম গ্যাসকুপ আবিস্কার হয়েছিলো হরিপুরে। ১৯৫৫ সালে সর্বপ্রথম এখানে গ্যাসের খোঁজ পাওয়া যায় এবং ১৯৫৭ সালে প্রথম গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। এরপর একে একে ১০টি কুপের সন্ধান মিলেছে এবং একটি তেলকুপেরও সন্ধান মিলেছে। বর্তমানে ৮টি কুপ থেকে অবিরাম গ্যাস উত্তলন করে দেশবিদেশে সরবরাহের কাজ চলে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের অনুসন্ধানের কাজ চলমান।

পর্যটন স্পট: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও বাংলার অন্যতম মাধুর্যপূর্ণ এলাকাগুলোর চাইতে কোনদিকে কম নয় আমাদের হরিপুর। এখানে রয়েছে চা বাগান, রাবার বাগান, সারি সারি ছোটো ছোটো টিলা, হাওর-বিল, নদী-নালা ইত্যাদি। বিশেষভাবে আল্লাহর সৃষ্টিকোলের মধ্যে যেসব অলৌকিকতা রয়েছে, এর মধ্যে হরিপুর “উৎলারপার” এবং “আগুনটিলা” হচ্ছে অন্যতম। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, তেল-গ্যাসের ব্যাপকতার দরুণ আগুনটিলার মাটিতে সজোরে আঘাত করলেই ভেসে ওঠে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। আবার উৎলারপারের বিশেষ একটা কুপের মধ্যে অবিরাম উঠতে থাকা উৎলার ফেনার মধ্যে ম্যাচের কাঠি মারলেই ধরে যায় আগুন। কী বিস্ময়কর ব্যাপার! যারা নিজ চোখে অবলোকন করেছেন, তারাই একমাত্র অনুধাবন করতে পেরেছেন আল্লাহর এই বিস্ময়কর সৃষ্টি।

খাদ্যাভ্যাস: এখানকার মানুষ সাধারণত বাঙ্গালির মতোই ভাতে মাছে অভ্যস্ত। তবে হরিপুর বাজারের “চানা-পোলাও” (ছোলা, পোলাও, পিয়াজু) বেশ প্রসিদ্ধ ও মজাদার। এছাড়াও তাড়ুহাটির (বাজারের একটি গলির নাম) পাখির গোশত সারা দেশে প্রসিদ্ধ। একতা: সবকিছুর পরে যেটা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে, আমাদের একতার বন্ধন। এক ভাইয়ের দুঃখে অন্য ভাই কাঁদে। এক ভাইয়ের বিপদে অন্য ভাই পাশে দাঁড়ায়। এক ভাইয়ের অপমান অন্য ভাই সহ্য করতে পারেনা। এক ভাইয়ের দুঃখে পাশে দাঁড়াতে পুরো এলাকাবাসীও প্রস্তুত- যা অন্যান্য এলাকায় বিরল হলেও আমাদের এলাকায় অতি সাভাবিক। এখানকার মানুষ শতকরা নিরানব্বই ভাগ মুসলমান হলেও, অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও ভ্রাতৃত্বের মর্যাদায় একসাথে বসবাস করে। কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক ঝগড়া-বিবাদ বা দাঙ্গার রেকর্ড ইতিপূর্বে নেই।

 

লিখেছেন: আব্দুল বাসিত নুয়েদ